Tuesday, September 9, 2008

সুরক্ষা স্বাধীনতা এবং সীমান্তে ‘পাখির ছানা’

খুব সন্তর্পণে বাংলাদেশে আরো একটা কাজ হয়ে গেল! পরিবর্তনের পাগলা হাওয়ায় পর্দার অন্তরালে কত অসাধ্য কাজ সাধন হওয়ার মত এটিও আমজনতার চোখের আড়ালেই থেকে গেল। অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়ের সাথে বাঘা শক্তি-পরাশক্তিসমূহ জড়িত বলে হয়তো প্রিন্ট ও স্ক্রীন মিডিয়া বিষয়টি নিয়ে বেশী কথা বলতেও সাহস পায়নি। বাংলাদেশকে সম্পূর্ন অন্ধকারে রেখে বাংলাদেশেরই সীমান্ত সার্ভে করে ফেলছে আমেরিকা যুক্তরাস্ট্র। গত ১৩ জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি সংস্থার প্রতিনিধিরা এ নিরাপত্তা সার্ভেতে অংশ নেন। সার্ভে চলে ২৮ জুন পর্যন্ত। তবে কেন এই সার্ভে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার হয়নি বাংলাদেশের কাছে। সার্ভে টিম যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার সময় মৌখিকভাবে বলে গেছে তারা সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে। তবে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়ে জানতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চিঠি দেয়া হবে (সূত্রঃ নয়াদিগন্ত, ১২ আগস্ট)। এতদিনে উক্ত সরকারী কর্মকর্তার চিঠি যুক্তরাস্ট্রে কারো কাছে পৌঁছেছে বলে ধরে নিলেও এর পরের অধ্যায়গুলো আমাদের মত ছা-পোষা মানুষেরা কোনদিনও জানতে পারবে না।
বাংলাদেশের সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে অথচ বাংলাদেশই জানে না? কি সাংঘাতিক কথা! অবশ্য জানার কথাও না! কারন আমাদের ইন্দ্রিয়জ্ঞানের দৌড় প্রতিযোগিতা যদি গজেন্দ্রের সাথে হয় তাহলে দোষ দিবই বা কাকে? যাহোক, তাহলে কাদেরকে জানিয়ে এটি করা হল? আবার কেনইবা করা হল? সীমান্তের ওপারের দেশটিও আমেরিকাকে এ ব্যাপারে না করেনি। সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তির স্বার্থ আধিপাত্যবাদী আঞ্চলিক শক্তির সাথে এক হয়ে গেলে সেখানে আর ‘না’ বলে কিছু থাকেনা। নতুন করে এ অঞ্চলে তথাকথিত ‘অশুভ চক্র (axis of evil)’ বানানোর সাথে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ‘অবৈধ একটি সন্তান’ জন্ম দেয়ার খায়েস আর সইতে পারছে না সময়ের পরীক্ষায় অনুত্তীর্ন আমাদের প্রতিবেশী কিছু অবিশ্বাসী বন্ধুরা। জাতিসংঘসহ বড় বড় দেশের উঁচু পদে সমাসীন থাকার সুবাদে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশবিরোধী নানামুখী অপ্রচার ও কৌশলের নতুন মাত্রায় আজ অবতীর্ন এই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক ক্যাপ্টেন শচীন কর্মকার গত ২৭ জুলাই এক ই-মেইল ম্যাসেজের মাধ্যমে সিআইএ পরিচালকের কাছে ভারতের পূর্ব সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশ ভূখন্ডে ইরাকের কুর্দিস্তানের অনুরুপ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টানদের জন্য পৃথক স্বায়ত্তশাসিত সংখ্যালঘু এলাকা প্রতিষ্ঠায় মার্কিন সাহায্য চেয়েছে। মাইনরিটি কংগ্রেস পার্টির আন্তর্জাতিক সম্পাদক এই কর্মকার ‘নাইন ইলেভেনের পর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে’ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘আজ আমাদের সাহায্য করো, আগামীকাল আমরা তোমাদের সহায়তা করবো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যেমন ইহুদীরা ভোগান্তির শিকার হয়েছিলেন, বাংলাদেশেও এখন হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টানরা ঠিক একইভাবে মুসলিম মৌলবাদীদের হাতে ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে’। (সূত্রঃ দৈনিক আমারদেশ, ২৯ নভেম্বর ২০০৭)
আজ একথা বলার অবকাশ নাই যে, পরিবর্তিত বিশ্বে ভারত নতুন করে তার সবল উপস্থিতি প্রমাণ করতে চাইছে। দেড় বিলিয়ন জনঅধ্যুষিত দক্ষিণ এশিয়ার দেশে দেশে ভারত তার সামাজিক , সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রভাব-প্রতিপত্তির আধিপাত্যের কারনে বিশ্বরাজনীতিতে চীনের সমান্তরালে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করতে উঠেপরে লেগেছে। সেজন্য বিশ্বব্যাপী তাদের একদল গবেষক নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। চীনের সাথে মুসলিম বিশ্বের বর্তমান ভাল সম্পর্কের বিপরীতে ভারত তার ভৌগোলিক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিন -পূর্ব এশিয়ার মাঝখানে দক্ষিন এশিয়ার অবস্থান। ভারতের বিকাশমান অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ন অঞ্চল বুঝাতে চীনকে স্মরন করিয়ে দিচ্ছে যে, ভারত মহাসাগরের উপর দিয়েই চলছে মুসলিম বিশ্বের ৭৫ শতাংশ বানিজ্যের আদান-প্রদান। রাশিয়া, আমেরিকা ও পাশ্চাত্যের শক্তি প্রদর্শনের মূল কেন্দ্রও কিন্তু এখানেই। সেদেশের অবসরপ্রাপ্ত সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা কর্ণেল হারিহারান বলেন, ‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীর আশ্রয়ে পোষ্য গনতন্ত্র এবং চীনের সিংগেল পার্টি মডেলের বাইরে একমাত্র ভারতের বৃহত্তর ও আধুনিক গনতন্ত্রই এ অঞ্চলের অভিবাবকের ভূমিকা পালন করার ক্ষমতা রাখে। তাছাড়া এদেশের রয়েছে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত নিউক্লিয়ার শক্তিধর বৃহৎ সামরিক শক্তি’। (SAAG, Paper No: 2804)

সেদেশের ইংরেজী নিউজ চ্যানেল সিএনএন-আইবিএনের প্রধান সংবাদদাতা সুমন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, রাজস্থানের হিন্দু মৌলবাদী সরকার ‘অবৈধ’ বাংলাদেশীদের শায়েস্তা করতে গুয়ান্তেনামো বে’র আদলে ট্র্যানজিট ক্যাম্প স্থাপন করতে চায়। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বাসুন্ধারা রাজে বলেছেন, ‘Round them (Bangladeshis) up and put them in transit camps and feed them (তাদেরকে বেঁধে ট্র্যানজিট ক্যাম্পে ভরে রাখো এবং সেখানেই খাওয়াও)। অবশ্য তার এই অসাড় দাবীকে উড়িয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাস্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘Perhaps she is shaken after recent blasts in Jaipur and is saying anything that is not true. She should have avoided (making the statement). She has just exposed her weakness.’
(খুব সম্ভবত মহিলাটি জয়পুরে সাম্প্রতিক বোমা বিস্ফোরনের কারনেই নড়েচড়ে উঠছেন। তিনি যা বলছেন তা সত্য নয়।এ ধরনের কথা বলা তার উচিৎও হয়নি। মুলতঃ (ঘটনা মোকাবেলা না করে) এর মাধ্যমে তিনি তার দুর্বলতাই প্রকাশ করছেন।) (সূত্রঃ বিডিনিউজ২৪, মে২৪, ২০০৮)

বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মাকসুদ এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘আমরা একটা সন্ত্রাসের কালে বাস করছি। সব দেশেই কমবেশি সন্ত্রাস আছে। উপমহাদেশের দেশগুলোতেও মাঝেমধ্যে সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা ঘটে। ভারতে কোথাও কোনো বোমা বিস্কোরিত হলে, তাতে মানুষ প্রাণ হারালে, এক সেকেন্ড বিলম্ব না করেও সেখানকার স্বাধীন সংবাদপত্র ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা’র বরাত দিয়ে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে। হোলির আগের দিন দিল্লির মার্কেটে বোমার ঘটনায় অথবা হায়দরাবাদের রেস্তোরাঁয় বোমা বিস্কোরণের ঘটনায় যেমনটি ঘটেছে এবারও তাই হলো। বাংলাদেশের ইসলামি অপরাধীরা যে ওই অপরাধ করতে পারে না তা নয়, যদি করে তাহলে তাদের উপযুক্ত শাস্তি জেল-ফাঁসি আমরা দাবি করব। কিন্তু অপরাধ সংঘটিত হওয়ার এক মিনিটের মধ্যে একটি দেশের দিকে তর্জনী তাক করা সমীচীন কি না তা গুরুত্ব দিয়ে ভাবার বিষয়। একটি দেশ মানে সে দেশের গোটা জনগোষ্ঠী।গুয়ানতানামো ক্যাম্পের মতো কোনো ক্যাম্পে আটক করে নির্যাতন করা ভারতের মতো একটি মহান গণতান্ত্রিক দেশের নীতি ও আদর্শের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। যদি কোনো বাংলাদেশি অবৈধভাবে সেখানে গিয়েও থাকে তারও মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব গণতান্ত্রিক ভারত সরকারের।‘ (প্রথম আলো, ২৭ মে ২০০৮)

এবার আমরা জানার চেষ্টা কেমন আছেন দেশের সীমান্তবাসীরা এবং ভারতীয় মিডিয়াইবা সীমান্তের খবরগুলো কেমন চোখে দেখে।

নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী কুখ্যাত ডাকাতদের র‌্যাব মেরে ফেললে যেখানে মানবতা উৎরে ওঠে, গরু ব্যবসায়ী জাকির হোসেনদের মেরে লাশ গুম করে ফেললেও মানবতা সেখানে ভুলুন্ঠিত হয়না! ‘নিয়মবহির্ভূত সব হত্যাই নিন্দনীয় অপরাধ’ এ সত্যটুকু স্বীকার করার সৎসাহসও আমাদের যেন নেই। কেন যেন নামকরা মানবাধিকার কর্মীদের সব ভন্ডামী সীমান্তে এসে আটকে পড়ে।
এসব নিস্পাপ ও দূর্বল ‘পাখির ছানাদের’ নিয়ে ওপারের জাঁদরেল শিকারীদের খেলা আমাদের দেশের নামকরা মানবতাবাদী ও একশ্রেনীর রাজনীতিকরা বোধ হয় উপভোগই করেন বলতে হবে।
২০০৮ সালের ১ জানুয়ারী দেশের একটি মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’- উল্লেখ করেছে, শুধুমাত্র ২০০৭ সালে ১২ মাসেই ১২০ জন গরু ব্যবসায়ী ও আবাদী কৃষককে পাখির মত গুলী করে মেরেছে বিএসএফ। অর্থাৎ মাসে কিনা ১০ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয়েছে গত বছরে। অপহরণ করেছে ৯৮ জনকে, ৩ জন বাংলাদেশী নারী বিএসএফ’র হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ১৯৮ জন বাংলাভাষী নাগরিককে পুশ-ইন করা হয়েছে। প্রতি বছর এ হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বেড়েই চলছে। গত সাড়ে আট বছরে ৭০৭ জন অর্থাৎ বছরে গড়ে ৮৩ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ। ২০০৮ সালের এই লেখা (২৫ আগস্ট) পর্যন্ত মোট ৭৮ জনের অকাল মৃত্যু হয়েছে তাদের হাতে। এখানেই শেষ নয়, সরকারীভাবে ভারত দাবী করে আসছে তাদের দেশে বড় বড় সব অনাসৃষ্টির পেছনে বাংলাদেশের হাত রয়েছে। মজার ব্যাপার হলো তারা দাবী করে, এসব কাজে নাকি সহায়তা দিয়ে আসছে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। উত্তর ভারতে উলফার স্বাধীনতা আন্দোলন, বোডোল্যান্ড আন্দোলসহ সব চরমপন্থী আন্দোলনের কলকাঠি নাড়া হয় নাকি বাংলাদেশ থেকেই।
বাংলাদেশের সাথে ভারতের রয়েছে ৪,০৯৫ কিমি (২৫৩৯ মাইল) বিস্তৃত সীমান্ত। বাংলাদেশের অভিযোগ-অনুরোধ অগ্রাহ্য করে সীমান্তে ভারত মোট ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করবে, সীমান্তের বাকি এলাকা দুর্গম। ইতিমধ্যে ২ হাজার কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শেষও হয়েছে।
ভারতীয় প্রচার মাধ্যমে বাংলাদেশের সীমান্ত প্রসংগ কেমনভাবে উপস্থাপন করা হয় তা জানার অধিকার বোধ হয় প্রত্যেক বাংলাদেশীরই রয়েছে। বাংলাদেশে ‘ভারত-বান্ধব’ বলে পরিচিত অনেক স্ক্রীন ও প্রিন্ট মিডিয়ার কথা শোনা যায়। কিন্তু ভারতে ‘বাংলাদেশ-বান্ধব’ বলে পরিচিত কোন মিডিয়া আছে কিনা তা বোধ হয় আমাদের নয়াদিল্লীতে কর্তব্যরত হাইকমিশনারই ভাল বলতে পারবেন।
গত ১৮ জুলাই, ২০০৮ ভারতীয় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা দুইজন বিডিআর সদস্যের মর্মান্তিক মৃত্যুর পাঁচদিন পর আবারো সংঘর্ষ বাঁধে। ভারতীয় প্রচার মাধ্যমে খবরটি আসে মোটামুটি এভাবে।
বিডিআরের গুলিতে বিএসএফ জওয়ান ইয়াদুর আপ্পা জীবন উৎসর্গ করলেন। সম্পূর্ন বিনা উস্কানীতে বিডিআর এ ধরনের অপকর্ম ঘটালো গত পাঁচ দিনে দুইবার। ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের জওয়ানসহ সাধারন গ্রামবাসীদের এভাবেই বিডিআর হত্যা করে। ২৩ জুলাই ১২৩নং ব্যাটালিয়নের সুদর্শন (৪০)কে বিডিআর হত্যা করেছে। মিরসুলতানপুর গ্রামের এক কৃষককে চাষরত অবস্থায় গুলী করে মালদা হাসপাতালে পাঠিয়েছে ওরা। বিএসএফের গুলীতে দুইজন বিডিআর কর্মকর্তার করুণ বিয়োগাত্বক ঘটনার ব্যাখ্যা করতে গিয়েও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে ভারতীয় প্রচার মাধ্যম। মেরিনিউজ নেটওয়ার্ক চোরাকারবারীদের সাথে বিডিআরকেও অভিযুক্ত করে লিখেছে, অবৈধ গরু ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ রাইফেলসের মৌন সম্মতিতেই তাদের চালান বাংলাদেশে পাঠায়। বিএসএফ সদস্য রামকিষান পান্ডে স্পীডবোটে ৩০০টি গরুর একটি পালকে রোধ করতে ধাওয়া করে। অথচ কারন ছাড়াই বিডিআর ১০০ রাউন্ড গুলী ছুঁড়তে ছুঁড়তে বিএসএফের দিকে ধেয়ে আসে। বিএসএফ এর জবাবে আত্মরক্ষার্থে মাত্র ১৯ রাউন্ড গুলী করে। বিডিআরের এরকম অযাচিত গুলীতে আহত হয়ে রামকিষান গঙ্গায় পড়ে গিয়ে সাঁতরে তীরে উঠেন। পরবর্তীতে বিএসএফ ২৫০টি গরুর মাথা উদ্ধার করে যার মুল্য ৭০ লাখ রুপী। অবশ্য চোরাচালানকারীরা ৫০টি গরুর মাথা নিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছে। এরপর সোভাপুর আউটপোস্টে ফ্ল্যাগ মিটিং বসে। দু’পক্ষই সংকল্পবদ্ধ হয় এ ধরনের ঘটনার পূনরাবৃত্তি রোধের। মেরিনিউজ খবর বিকৃতি করে আরো জানায়, পূর্বাপর বিভিন্ন ঘটনা প্রমাণ করে বিডিআর এসব ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের সিদ্ধান্তকে খুব বেশী পাত্তা দেয়না।
মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ উক্ত ঘটনাটির কারন অনুসন্ধান করে একটি বিশ্লেষনাধর্মী রিপোর্ট দেয়। রিপোর্টে বলা হয়, জুলাই ১৭, ২০০৮ রাতে একটি স্পীডবোট ও ইঞ্জিন চালিত একটি নৌকা নিয়ে বিএসএফ পদ্মা নদীতে টহল দিতে দিতে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের দেড় কিমি ভেতরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার রঘুনাথপুর গ্রামের ভেতর ঢুকে পড়ে। রাত পৌনে বারোটায় বিডিআর অনুপ্রবেশকারীদের ধরার চেষ্টা করলে স্পীডবোট থেকে বিএসএফ গুলী ছোড়ে। প্রাণ হারান বিডিআর অফিসার আব্দুল হান্নান এবং কৃষ্ণপদ পাল। প্রমান হিসেবে ‘অধিকার’ প্রত্যক্ষদর্শীদের নাম দিয়েছে গ্রামবাসী জিয়াউল হক, ৩৯ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের অপারেশন অফিসার মেজর আবু হাসান ও নিহতদের পোস্ট মর্টেম সম্পন্নকারী চিকিৎসক ডাঃ তাজউদ্দীন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিএসএফ কর্তৃক দুইজন বিডিআর নিহত হওয়ার খবর সম্পূর্ন অস্বীকার করে প্রেস রিলিজ দেয়। এত বড় ডাহা মিথ্যাচার কিন্তু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম করতেও শরম পেয়েছে। ঢাকায় বসে প্রেস রিলিজে হাইকমিশনার জানায়, ‘বিএসএফের গুলী বিনিময় হয়েছে স্মাগলারদের সাথে, বিডিআরের সাথে নয়’। ভারতের সৌভাগ্য, এমন উদ্ধত ও মিথ্যা কথা বলায় হাইকমিশনারকে তলব করা তো দূরের কথা দায়ছাড়া গোছের ‘দুঃখজনক’ শব্দ ছাড়া দেশপ্রেমিক কোন শক্তির পক্ষ থেকে কড়া কোন প্রতিবাদও আসল না। অবশ্যি ভারতীয় বশংবদের বিপরীত প্রজাতির কেউ এমন কথা বলে থাকলে আমাদের মিডিয়া তৎপর হয়ে তাকে ক্ষমা চাওয়াতে বাধ্য করত। যাহোক, মেজর হাসান অভিযোগ করেন, ভারত ১৯৭৫ সালে প্রণীত ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্ত গাইডলাইন মেনে চললে এ ধরনের ঘটনা কখনো ঘটত না।
সবশেষে আমরা বলতে পারি, ভাল প্রতিবেশী পাওয়ার ভাগ্য সবার কপালে জোটে না। মর্যাদাকর রাস্ট্র প্রতিষ্ঠায় সারাক্ষন প্রতিবেশীর সাথে ঝগড়া করাও কোন কল্যানকর রাস্ট্রের কাম্য নয়। আমরা তা চাইও না। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, তাই বলে ‘জ্বী হুজুর মার্কা’ নতজানু পররাস্ট্রনীতি শক্তিধরদের মোকাবেলার কোন সমাধানও দিতে পারেনি। এভাবে ঠান্ডা মাথায় যুদ্ধ-বিগ্রহ ছাড়া নিয়মিতভাবে মানুষজনকে পাখির মত গুলী করে হত্যা ও অন্যদেশ কর্তৃক সীমান্ত সার্ভে করা পৃথিবীর অন্য কোন দেশের চৌহদ্দিতে হয় কিনা জানিনা। আমাদের দেশ, জীবন ও মান এত সস্তা হতে পারেনা। দূর্বল সরকারের সুযোগে স্বদেশের সার্বভৌমত্ব বিনাশে অশুভ কোন শক্তির উদ্ভব পক্ষ-বিপক্ষ কারো জন্য মংগল বয়ে আনবে না। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে গৌরবজনক অবস্থানে নিতে সীমান্তকে সুরক্ষিত করতে হবে। শান্তিকামী বিশ্বসম্প্রদায়ের সহায়তায় দ্রুত আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী বার বার টান টান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির পথ সম্মানজনক উপায়ে চিরতরে রুদ্ধ করা সময়ের দাবী।
*লেখাটা দৈনিক নয়াদিগন্ত ছেপেছে ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮-এ।

3 comments:

umm_abdullah said...

পড়ছি। ধন্যবাদ বিশ্লেষনী লেখার জন্য।

Shahin Siddiquee said...

Thank you very much for your comment.

যাযাবর said...

কী বলব বুঝে পাচ্ছিনা। এভাবে ওরা মুখের উপর আমাদের স্বাধীনতাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলে, এমনভাব করে যেনো এক চুটকি দিয়ে উড়িয়ে দেবে আমাদেরকে। ...... আর আমাদের দেশের কিছু বুদ্ধিজীবি(!!)রা কী করে যে এদেরকেই প্রভু মানে খোদা মালুম! ......পরিসংখ্যানগুলো কী মারাত্নক! অথচ আমাদের দেশের মিডিয়া কখনোই সীমান্ত-ইস্যুটাকে ইম্পর্ট্যান্টস দিয়ে দেখায়না। যার কারনে সাধারন মানুষও এ বিষয়ে সচেতন না।